রক্তের গ্রুপ নিয়ে কিছু মূল্যবান তথ্য, মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম
প্রধান উপাদান রক্ত। শরীরের মোট ওজনের শতকরা ৭ ভাগ রক্ত, যার ৯২ ভাগই জলীয়
পদার্থ।ঈষৎ ক্ষারীয় রক্ত আপাত দৃষ্টিতে একই রকম মনে হলেও আন্তর্জাতিক রক্ত
পরিসঞ্চালন সোসাইটির মতে এগুলো ৩২টি ভিন্ন ভিন্ন ভাগে বিভক্ত। এই ভিন্নতার
মূল কারণ, রক্তে নানা রকমের এন্টিজেনের উপস্থিতি।
এন্টিজেন হলো সেই পদার্থ যা সুনির্দিষ্ট এন্টিবডির সাথে বন্ধনে আবদ্ধ
হয়। আর এন্টিবডি হলো বিশেষ ধরনের প্রোটিন (আমিষ), যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
সৃষ্টি করে।
৩২টি ভিন্ন ভিন্ন বিভাজন থাকলেও ব্যবহারিক দিক থেকে রক্তকে প্রধানত ‘এ’,
‘বি’ ‘ও’ এবং ‘আরএইচডি’ এন্টিজেন এই দু’টি উপায়ে ভাগ করা হয়। কিছু
ব্যতিক্রম ছাড়া মানুষের রক্তের গ্রুপ পরিবর্তন হয় না।
১। পৃথিবী জুড়ে মানুষের শরীরে প্রায় ২৯টি ব্লাড গ্রুপ
রয়েছে। ২৯টি ব্লাড গ্রুপে মোট ৬০০রও বেশী অ্যান্টিজেন আছে। তবে এই ৬০০টির
অনেকই খুব দুষ্প্রাপ্য বা কোনো বিশেষ জাতির বাইরে দেখা যায় না। তবে প্রধান
প্রুপ ৪টি।
২। অনেক গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণ তাদের নিজেদের থেকে
আলাদা একটি একটি রক্তের গ্রুপ বহন করে এবং মা, ভ্রূণের RBC সমূহের বিরুদ্ধে
অ্যান্টিবডি গঠন করতে পারেন।
৩। রক্ত দান করার সময় গ্রহীতার রক্তে দাতার রক্ত
মেশবার সময় গ্রুপ গ্রহনযোগ্য হবে না যদি গ্রহীতার রক্তরসে অবস্থিত
অ্যান্টিবডি দাতার কোষের উপরস্থ অ্যান্টিজেনকে চিনতে পারে, পারলে গ্রহীতার
অ্যান্টিবডির আক্রমণে দাতার রক্তকোষগুলি তাল পাকিয়ে জমাট বেঁধে যাবে বা
ফেটে নষ্ট হয়ে যাবে।
৪। কোনো নীরোগ ব্যক্তির নিজের রক্তকোষে যে অ্যান্টিজেন থাকে তার বিরুদ্ধে অ্যান্টীবডি তৈরি হয় না।
৫। ‘এবি’ রক্ত গ্রুপধারী ব্যক্তির লোহিত রক্তকণিকার
পৃষ্ঠে এ এবং বি উভয় প্রকার অ্যান্টিজেন থাকে। এছাড়া রক্তরসে এ বা বি
অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে কোন অ্যান্টিজেন থাকে না। তাই এবি রক্তগ্রুপধারী
কোন ব্যক্তি যেকোন কারও থেকে রক্তগ্রহণ করতে পারে। তাদের বিশ্বগ্রহীতা বলা
হয়।
৬। ‘এ’ রক্তগ্রুপধারী ব্যক্তির লোহিত রক্তকণিকার
পৃষ্ঠে এ অ্যান্টিজেন থাকে। এছাড়া রক্তরসে বি অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে
আইজিএম (Igm) অ্যান্টিবডি থাকে। তাই এ রক্তগ্রুপধারী কোন ব্যক্তি শুধুমাত্র
এ বা ও গ্রুপের রক্তই গ্রহণ করতে পারে এবং এ বা এবি রক্তগ্রুপধারী
ব্যক্তিদের রক্ত দিতে পারবে।
৭। ‘বি’ রক্ত গ্রুপধারী ব্যক্তির লোহিত রক্তকণিকার
পৃষ্ঠে বি অ্যান্টিজেন থাকে। এছাড়া রক্তরসে এ অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে
আইজিএম অ্যান্টিবডি থাকে। তাই বি রক্তগ্রুপধারী কোন ব্যক্তি শুধুমাত্র বি
বা ও গ্রুপের রক্তই গ্রহণ করতে পারে এবং বি বা এবি রক্তগ্রুপধারী
ব্যক্তিদের রক্ত দিতে পারবে।
৮। ‘ও’ রক্তগ্রুপধারী ব্যক্তির লোহিত রক্তকণিকার
পৃষ্ঠে এ বা বি কোন অ্যান্টিজেনই থাকে না। তাদের রক্তরস এ অ্যান্টিজেনের
বিরুদ্ধে আইজিএম এবং বি অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে আইজিএম অ্যান্টিবডি ধারণ
করে। তাই ও রক্তগ্রুপধারী কোন ব্যক্তি শুধুমাত্র কোন ও গ্রুপধারী ব্যক্তির
কাছ থেকেই রক্তগ্রহণ করতে পারবে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন